কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ইউনাইটেড হাসপাতাল অ্যান্ড আর্থোপেডিক সেন্টারে রিমা প্রামাণিক (১৮) নামের একজন নার্সের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। সোমবার ভোর সাড়ে ৪টায় হাসপাতালের একটি কক্ষ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় হাসপাতালের এমডি হানিফুর রহমান সুমনকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ।

সোমবার এ ব্যাপারে থানায় অপমৃত্যু দায়ের হলেও মঙ্গলবার দুপুরে নিহত রিমার বাবা সেন্টু চন্দ্র প্রামাণিক বাদী হয়ে দুইজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩-৪ জনকে আসামি করে ভৈরব থানায় একটি মামলা করেন।

আসামিরা হলেন- হাসপাতালের এমডি হানিফুর রহমান সুমন (৩৫) ও নার্স লিজাসহ (২৪) অজ্ঞাত ৩-৪ জন।

এর আগে মঙ্গলবার ভোরে হাসপাতালের এমডি হানিফুর রহমান সুমনকে পুলিশ বাসা থেকে আটক করে। পুলিশ বলেছিল তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় কিন্তু দুপুরে মামলা দায়েরের পর তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, নার্স রিমা প্রামাণিক দুই বছর যাবত ওই হাসপাতালে চাকরি করতেন। ঈদের তিন দিন আগে তিনি ছুটি নিয়ে তার বাবার বাড়ি রায়পুরার পিরিজকান্দি গ্রামে চলে যান। শনিবার ঈদের আগের দিন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরি ফোন দিয়ে ঈদের দিন ডিউটি করতে তাকে হাসপাতালে আসতে বলা হয়। ঈদের দিন ডিউটি করে তিনি পাশের বিল্ডিংয়ের ৫ম তলায় নার্সদের থাকার রুমে রাতে ঘুমিয়ে পড়েন।

এজাহারে বলা হয়- রোববার ঈদের রাতে কোনো এক সময় হাসপাতালের কয়েকজন মিলে তাকে গলাটিপে হত্যা করে আত্মহত্যা হিসেবে প্রচার করে। পরে ভোরে নিহতের বাবাকে জানানো হয় তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। সোমবার সকালে পুলিশকে ঘটনাটি অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে লাশটি কিশোরগঞ্জ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়।

নিহত নার্স রিমার বাবা সেন্টু চন্দ্র প্রামাণিক এই প্রতিনিধিকে জানান, আমার মেয়ে ঈদের আগে ছুটিতে বাড়ি আসে। গত শনিবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরি ফোন দিয়ে হাসপাতালে ডিউটি করতে আসতে বলে। ঈদের দিন ডিউটি করল আমার মেয়ে কিন্তু রাত সাড়ে ৪টায় ফোন দিয়ে বলে আমার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। খবর পেয়ে আমরা সোমবার ভোরে হাসপাতালে এসে দেখি রিমার লাশ হাসপাতালের নিচের কক্ষে শোয়ানো রয়েছে। সে আত্মহত্যা করলে তার লাশ ৫ তলার শয়ন কক্ষে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকত। তার লাশ রুম থেকে বের করা হলো কেন?

তিনি বলেন, পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টে আমার মেয়ের যৌনাঙ্গে রক্তের দাগ রয়েছে। তারা আমার মেয়েকে ধর্ষণ করে গলাটিপে হত্যা করে। আমি গতকাল না বুঝে অপমৃত্যু মামলা করেছিলাম। মঙ্গলবার হত্যা মামলা করেছি। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।

ভৈরব থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. গোলাম মোস্তফা জানান, ঘটনাটি আত্মহত্যা না হত্যা তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে বলা যাবে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা থানায় দুজনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন। হাসপাতালের এমডি সুমনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ঘটনাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।